বস্তুতঃ তুমিই আমার মর্ম রচনা করিয়াছ; তুমি মাতৃগর্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে। আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্যরূপে নির্মিত; তোমার কর্ম সকল আশ্চর্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।
তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের বিশ্বাস অল্প বলিয়া; কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের একটি সরিষা-দানার ন্যায় বিশ্বাস থাকে, তবে তোমরা এই পর্বতকে বলিবে, ‘এখান হইতে ঐখানে সরিয়া যাও।’
পরে তিনি সেই পাঁচখানা রুটি ও দুইটি মাছ লইয়া স্বর্গের দিকে ঊর্ধ্বদৃষ্টি করিয়া সেইগুলিকে আশীর্বাদ করিলেন, ও ভাঙ্গিলেন; আর লোকদের সম্মুখে রাখিবার জন্য শিষ্যগণকে দিতে লাগিলেন। তাহাতে সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল, এবং তাহারা যাহা অবশিষ্ট রাখিল, সেই সকল গুঁড়াগাঁড়া কুড়াইলে পর বারো ডালা হইল।
তিনি বিশ্রামবারে কোন সমাজ-গৃহে শিক্ষা দিতেছিলেন। আর দেখ, একজন স্ত্রীলোক, যাহাকে আঠার বৎসর ধরিয়া দুর্বলতার আত্মায় পাইয়াছিল, সে কুব্জা, কোন মতে সোজা হইতে পারিত না। তাহাকে দেখিয়া যীশু কাছে ডাকিলেন, আর কহিলেন, হে নারি, তোমার দুর্বলতা হইতে মুক্ত হইলে। পরে তিনি তাহার উপরে হস্তার্পণ করিলেন; তাহাতে সে তখনই সোজা হইয়া দাঁড়াইল, আর ঈশ্বরের গৌরব করিতে লাগিল। কিন্তু বিশ্রামবারে যীশু সুস্থ করিয়াছিলেন বলিয়া সমাজাধ্যক্ষ ক্রুদ্ধ হইল, সে উত্তর করিয়া লোকদিগকে বলিল, ছয় দিন আছে, সেই সকল দিনে কর্ম করা উচিত; অতএব ঐ সকল দিনে আসিয়া সুস্থ হইও, বিশ্রামবারে নয়। কিন্তু প্রভু তাহাকে উত্তর দিয়া কহিলেন, কপটীরা, তোমাদের প্রত্যেক জন কি বিশ্রামবারে আপন আপন বলদ কিম্বা গর্দভ যাবপাত্র হইতে খুলিয়া জল খাওয়াইতে লইয়া যায় না? তবে এই স্ত্রীলোক, অব্রাহামের কন্যা, যাহাকে শয়তান, দেখ, আজ আঠার বৎসর ধরিয়া বাঁধিয়া রাখিয়াছিল, ইহার এই বন্ধন হইতে বিশ্রাম বারে মুক্তি পাওয়া কি উচিত নয়? তিনি এই সকল কথা কহিলে তাঁহার বিপক্ষেরা সকলে লজ্জিত হইল; কিন্তু তাঁহার দ্বারা যে সমস্ত মহিমার কার্য হইতেছিল, তাহাতে সমস্ত সাধারণ লোক আনন্দিত হইল।
যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে, আর সন্দেহ না কর, তবে তোমরা কেবল ডুমুরগাছের প্রতি এইরূপ করিতে পারিবে, তাহা নয়, কিন্তু এই পর্বতকেও যদি বল, ‘উপড়িয়া যাও, আর সমুদ্রে গিয়া পড়,’ তাহাই হইবে।
কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়া তাঁহাকে হাঁটিতে দেখিয়া তাঁহারা মনে করিলেন, অপচ্ছায়া, আর চেঁচাইয়া উঠিলেন; কারণ সকলেই তাঁহাকে দেখিয়াছিলেন ও ব্যাকুল হইয়াছিলেন। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন, তাঁহাদিগকে বলিলেন, সাহস কর, এ আমি, ভয় করিও না।
তাঁহারা প্রার্থনা করিলে, যে স্থানে তাঁহারা সমবেত হইয়াছিলেন, সেই স্থান কাঁপিয়া উঠিল; এবং তাঁহারা সকলেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন ও সাহসপূর্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে থাকিলেন।
পরে সেই অন্য শিষ্য, যিনি কবরের নিকটে প্রথমে আসিয়াছিলেন, তিনিও ভিতরে প্রবেশ করিলেন, এবং দেখিলেন ও বিশ্বাস করিলেন। কারণ এ পর্যন্ত তাঁহারা শাস্ত্রের এই কথা বুঝেন নাই যে, মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠিতে হইবে।
এই সকল ঘটিল, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই বাক্য পূর্ণ হয়, ‘‘দেখ, সেই কন্যা গর্ভবতী হইবে, এবং পুত্র প্রসব করিবে, আর তাঁহার নাম রাখা যাইবে ইম্মানূয়েল;” অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ, ‘আমাদের সহিত ঈশ্বর’।